সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
আগামী ২৭ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার সময় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে বলে ইসি ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জোট এবং আওয়ামী লীগের সমমনা দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার মালিক হলো নির্বাচন কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী তারা নির্বাচন করছে কি না সেটাই আমাদের চাহিদা। ইসি যে তারিখ নির্ধারণ করবে আমরা সেই তারিখেই নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তবে বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নির্ধারণ হলেই নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আমরা কথা বলব। বিএনপি বলছে, এই নির্বাচনে আমরা অংশ নেব কি না তাই নিশ্চিত নয়।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী ডিসেম্বর বিজয়ের মাস তাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চায় ডিসেম্বরে শেষে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলোও ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ চায় স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে ডিসেম্বরে মাসব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা করে শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে ইতিবাচক হবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মনে করেন, ডিসেম্বরে সবসময়ই আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকে। জনগণও স্বাধীনতা প্রশ্নে আওয়ামী লীগের প্রতি দূর্বল। এবার দলটি বিজয়ের মাসে তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন কর্মসূচি রাখবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান ডিসেম্বরে এবং মাসটির শেষের দিকে নির্বাচন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের প্রাথমিক তারিখ রাখা হচ্ছে। ৪৫ দিন হাতে রেখে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফিসল দেওয়া হতে পারে। এ জন্য একটি নির্বাচনি রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে করতে হবে।
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনে জন্য ৪০ হাজার ৬৫৭টি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা করেছে ইসি। নির্বাচন-সংক্রান্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৪ হাজার ৪৫৩টি। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তফসিল ঘোষণার পর আসন অনুসারে ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। এরইমধ্যে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে বলে ইসি ঘোষণাও দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সেই অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাজেই নির্বাচনের তারিখ আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ কোনো সমস্যা নয়। যুক্তফ্রন্ট নিরপেক্ষ নির্বাচনের রূপরেখা ঠিক করছে। আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একটি পক্ষ মনে করে ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া ভালো। কারণ নির্বাচনের পরেরদিন শুক্রবার এবং তারপর দুদিন ছুটি। এরপরই বছর শুরু। বছরের প্রথমদিন অফিসগুলোয় নতুন সরকারের আলোচনায় সরব থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের পর তিনদিন জনগণ ছুটির আমেজে থাকবে। তবে ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশ মনে করে ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়া বেশি ভালো।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর বেশ কয়েকটি নির্বাচন বৃহস্পতিবার করা হয়েছে ছুটির আমেজের জন্যই।